বাতিঘর হয়ে মেধাবীদের পাশে ‘দুর্বার প্রগতি সংগঠন’

এয়াছির আরাফাত..
আঁধার ঘরে ওরা চাঁদের আলো। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নানা প্রতিকুলতা বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। তবুও দমিয়ে রাখা যায়নি ওদের। হাজারো কষ্টের মাঝে হাঁসি ফুটিয়েছে ওরা পরিবারের মুখে। পিএসসি জেএসসি এবং এসএসসি প্রতিটি পরীক্ষায় ওরা উত্তীর্ণ হয়েছে জি.পি.এ ৫ পেয়ে।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে এখন উচ্চ মাধ্যমিকের ধাপে সবাই। ওদের এই পথচলা খুব একটা সুখের নয়। ওরা কেউ দিনমজুর, কৃষকের সন্তান কেউবা পিতৃ-মাতৃহীন। চড়াই উৎরাই পার করে এখন তাদের স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। ওদের কারো স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া, কেউবা হতে চান একজন আদর্শ শিক্ষক আবার কেউ মস্ত বড় আইনজ্ঞ। কিন্তু আর্থিক অনটন আর অসঙ্গতি বাঁধা ওদের স্বপ্ন পূরনে। দারিদ্রতার কষাঘাতে যখন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শঙ্খিত এসব মেধাবী, ঠিক তখনই ওদের পাশে এসে দাড়িয়েছে ‘দুর্বার’।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলোর অন্যতম ‘দুর্বার প্রগতি সংগঠন’। ২০১১ সালে গড়ে ওঠা এ সংগঠন ধারাবাহিক সৃজনশীল ও জনহিতকর কার্যক্রম করে আসছে। এবার সমগ্র উপজেলার স্কুল-মাদ্রসা থেকে মেধায় অনন্য- তবে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল এমন মেধাবী নির্বাচনে নেমেছে তারা। উদ্দেশ্যে আর্থিক অনটন ও অস্বচ্ছল পরিবারের মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষায় সহায়ক ভুমিকা রাখা। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ৭০টি স্কুল-মাদ্রাসা থেকে ৩৫ শিক্ষার্থীকে ‘আগামীর দুর্বার’ নির্বাচিত করেছে সংগঠনটি। গত ১০ মার্চ উপজেলার সবক’টি স্কুল-মাদ্রাসায় একযোগে ফরম বিতরণের মধ্যে দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন সংগঠনের সদস্যরা। এরপর ৪১ জন আবেদনকারী থেকে যাচাই-বাছাই করে ৩৫ শিক্ষার্থীকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়।
দুর্বারের উদ্যেগটি নিয়ে জানতে চাইলে মনোনীত মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন নুর নবী জানায়, ‘বাবা-মা আর তিন ভাইকে নিয়ে তাদের সংসার। তিন ভাইয়ের পড়ালেখা খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। নুর নবীর ইচ্ছে একজন নামকরা আইনজীবি হওয়া। দুর্বার সংগঠনের এই উদ্যেগটি তাকে আশার আলো দেখাচ্ছে।
আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ চৌধুরী জানায়, ‘আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষায় খরচ অনেক বেশি। আর্থিকভাবে আমরা যারা অস্বচ্ছল তাদের পাশে যদি সমাজের বিত্তবানরা দুর্বার সংগঠনের মতো সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় অনেক উপকারে লাগবে। পিতৃহারা ইমতিয়াজ জানায় বড় হয়ে একজন চিকিৎসক হতে চায় সে।’
আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী মোঃ সালমান জানায়, ‘উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া তার লক্ষ্য। বাবা মা ও চার ভাই নিয়ে পরিবারে দিনমজুর পিতাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অভাবের সংসারে চার ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ মেটানো রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। দুর্বারের এমন উদ্যেগে শিক্ষা জীবন ব্যাহত হবেনা বলে আশা তার।’
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসান সাইফ উদ্দীন জানান, ‘আমরা এবার ঐসব শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করেছি যারা ২০১৬-১৭ সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে। তারা শুধু এসএসসি নয় পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায়ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। মেধাবী এই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে হলেও সন্তানদের উচ্চশিক্ষা অর্জন করাতে চান। তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে মিরসরাইয়ের শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তিদের সহযোগিতায় সর্বাত্মকভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করছে দুর্বার প্রগতি সংগঠনের।’
আগামী ২৭ জুলাই বর্ণিল অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে মিরসরাইয়ের আগামীর দুর্বার হিসেবে নির্বাচিতদের সংবর্ধনা, সনদ, শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করবে এ সংগঠন। একইদিন দুর্বার বির্তক উৎসবের চুড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
এ প্রসঙ্গে ‘আগামীর দুর্বার’ নির্বাচক পরিষদের আহবায়ক নাঈমুল হাসান ও সদস্য সচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন- ‘আমরা মিরসরাইয়ের এমন কিছু অদম্য শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে চাই, যারা মেধায় অনন্য- তবে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তাদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে আমরা তাদের সঙ্গী হয়ে কাজ করবো।’

 

Share

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*